মাসিক রেগুলার করার জন্য কি কি করনীয় এবং অনিয়মিত মাসিক হলে পরবর্তী সময় কালে কি কি সমস্যা হতে পারে? অনিয়মিত মাসিক বা ঋতুস্রাব মহিলাদের খুব কমন একটি সমস্যা । সাধারণত প্রায় সকল মহিলাই জীবনে কোনো না কোনো সময় এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। কোন মহিলার যদি 21 দিন থেকে 35 দিন পর্যন্ত মাসিক হয় তাহলে সেটাকে নিয়মিত মাসিক বলা যাবে। কিন্তু যদি কোন মহিলার 21 দিনের আগে বা 35 দিনের পরে মাসিক হয় তাহলে সেটাকে অনিয়মিত মাসিক বলতে হবে। কোন মেয়ে যখন কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে এই সময়টাতেই তাদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে থাকে। আবার কোন মহিলা যৌবনের শেষ পর্যায়ে চলে আসে অর্থাৎ মহিলাদের বয়স যখন 40 থেকে 50 এর কাছাকাছি আসে তখনও অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। তবে এর বাহিরেও নানা কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে কোন কোন মহিলা রয়েছে যাদের কোন মাসে নিয়মিত মাসিক হয় না ।
একমাসেই খুব বেশি রক্তপাত হলে আর এক মাসে দেখা যায় মাসিক হয় না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দুই তিন মাস পর পর মাসিক হয়ে থাকে, কারোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় খুব বেশি রক্তপাত হয় আবার কারোর দেখা যায় খুব কম মাত্রায় রক্তপাত হয় । মেয়েদের শরীরে যখন ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য দেখা দেয় তখন অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মানুসিক চাপের কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। হঠাৎ করে শরীরের ওজন খুব বেশি কমে গেলে বা খুব বেশি বেড়ে গেলে মাসিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে যদি রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয় তাহলে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
এছাড়াও জরায়ুর বিভিন্ন জটিলতার কারণে মাসিক অনিয়মিত হয়ে থাকে, যেমন জরায়ুতে টিউমার ক্যান্সার ইত্যাদি অসুখের কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। আবার যেসকল মহিলারা শিশুদেরকে বুকের দুধ খাওয়ায় তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
অনিয়মিত মাসিকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।
আপনারা মাসিক নিয়মিত করতে চাইলে এই দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করতে হলে আদা ব্যবহার করতে পারেন 1 কাপ পানিতে 1 থেকে 2 চা চামচ আদা কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে 5 থেকে 7 মিনিট খুব ভালোভাবে সিদ্ধ করুন এরপর আদা সিদ্ধ পানিটুকু দিনে তিনবার সকাল, দুপুর এবং রাতে এক কাপ করে একমাস পান করুন টানা একমাস এই আদা সিদ্ধ পানি পান করলে আপনার অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়ে যাবে। আধার পাশাপাশি আপনার অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে চাইলে তেঁতুল খেতে পারেন। মনে রাখবেন তেতুল মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে খুব বেশি সাহায্য করে। এক গ্লাস পানির মধ্যে কিছুটা তেতুল নিয়ে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন এবার এই ভিজিয়ে রাখা তেতুলের পানিতে কিছুটা লবণ এক চামচ চিনি এবং সামান্য পরিমাণ জিরার গুঁড়া মিশিয়ে খুব ভালোভাবে মিক্স করে এরপর দিনের দুইবার সকালে এবং দুপুরের পান করবে। এভাবে নিয়মিত একমাস পান করলে আপনার অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়ে যাবে।
এই দুটির পদ্ধতি অবলম্বন করার পরও আপনার মাসিক যদি নিয়মিত না হয় একটানা নব্বই দিনের মধ্যে আপনার যদি কোন মাসিক না হয় তাহলে অবশ্যই দেরি না করে একজনের ডাক্তারের কাছে যাবেন।আপনার মাসিক যদি 21 দিনের আগেই শুরু হয়ে যায় এবং একটানা সাত দিনের বেশি দিন ধরে চলতে থাকে এবং মাসিকের সময় যদি খুব বেশি রক্তপাত হয় ও তলপেটে খুব বেশি ব্যথা অনুভব হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন আপনার মাসিক অনিয়মিত হওয়ার কারণে আপনার শারীরিক নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও এখনো যে সকল মেয়েরা অবিবাহিত তাদের এই অনিয়মিত মাসিকের কারণে কিন্তু পরবর্তী সময়ে সন্তান জন্মদানে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
আর আপনার শরীরের ওজন কে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন। যতটা সম্ভব নিজেকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন। আর অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাবেন। সেই সাথে প্রতিদিন 4 থেকে 5 লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করবেন। আর যে সকল খাবারে আয়রন এর পরিমাণ বেশি সেই সকল খাবার গুলো বেশি করে খাবেন। যেমন লালশাক, কলিজা কালোজাম এবং আঙ্গুর। এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে আপনার শরীরে রক্ত পরিমাণ বাড়বে আর রক্তের পরিমাণ বাড়লেও আপনার অনিয়মিত মাসিক ও নিয়মিত হবে।
Source: Dr. Farhana